“স্বামীজী একদিন বলরাম বসুর বাড়িতে স্নান করছিলেন।জনৈক কলেজের যুবক তাঁকে বলেন,’মশাই আপনার পায়ের মাসলগুলো তো বড় সুন্দর!’স্বামীজী অতি সহজ ভাবে উত্তর দিলেন,’হ্যাঁরে, তা হবে না?ঠাকুর যে আমাকে দেখতে বড় ভালবাসতেন।’
স্বামীজীর সবটাই সুন্দর।তাঁর ঠাট্টা সুন্দর। বেলুড় মঠে বাঁধানো প্রশস্ত চাতালে বিস্তীর্ণ মাঠে কুকুর, ছাগল, হরিণ নিয়ে খেলা ও ছোটাছুটি সুন্দর।গরুর গায়ে হাত বোলানো- এমনকি শুধু শুধু পায়চারি করে ঘুরে বেড়ানো- সবই সুন্দর।
—তাঁর রূপ সুন্দর, গুণ সুন্দর, কথন সুন্দর ,চলন সুন্দর, ধ্যান সুন্দর, কর্মপ্রচেষ্টা সুন্দর,গান সুন্দর,বাজনা সুন্দর,হাসি সুন্দর,কান্না সুন্দর, দুঃস্থের প্রতি সমবেদনা সুন্দর। মুখমন্ডলে জীবের প্রতি করুণার আভা অতীব মনোহর। কখনো কখনো বকুনি–বড়ই’ পিলে চমকানো’– বিষম বিপদ। কিন্তু তারপর, কাছে ডেকে খাবার জিনিস দেওয়া,ভালবাসার প্রকাশ সুমধুর।
‘মধুরাধিপতেরখিলং মধুরম্ ‘। ভগবান ‘সত্যং শিবং সুন্দরম্ ‘ রূপে প্রকাশিত হন ।
আমরা স্বামীজীকে চর্মচক্ষে দেখিনি ,তবে ছবি দেখেছি । বর্তমানে স্বামীজীর পঁচানব্বইটি ছবি আছে ।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা থেকে আমরা জানতে পারি : –
যদি ভালো লাগে তো যুবক নায়ক নরেন্দ্রের চিত্র ধ্যানে ধরে দেখতে চেষ্টা করো। সেই মুণ্ডিত মস্তক, কৌপীনবান, সতেজ, সুন্দর, গৈরিকাভ, সুঠাম, নয়নাভিরাম তনু। সেই পদ্মপলাশ আঁখি— সরসিজনয়নং নমো পঙ্কজনয়নায়। সে আঁখির তুলনা হয় না। স্বামী সারদানন্দ একদিন মুগ্ধ হয়ে এইমাত্র বলে চুপ করেছিলেন— ‘সে যে কি চোখ— কি আর বলবো ?’ আবার বলতে ইচ্ছা হয়—
‘নমঃ পঙ্কজনাভায় নমঃ পঙ্কজমালিনে।
নমঃ পঙ্কজনেত্রায় নমস্তে পঙ্কজাঙ্ঘ্রয়ে।।’
একজন বলেন— স্বামীজী যখন বলরাম বাবুর হলঘরে ঘুমিয়ে থাকতেন, দেখেছি তখনও চোখ সবটা বুজতো না। পাতায় পাতায় কখনও জোড়া লেগে মুড়তো না। শিবনেত্র— সত্য সত্য।
স্বামীজীর ভাই মহেন্দ্রনাথ দত্ত লিখেছেন “এক গণতকার ..নরেনের ডান পায়ের বুড়ো আঙ্গুলের তলা ও তার নিচের অংশে শঙ্খ ,চক্র ,গদা ও পদ্ম লক্ষ করে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছিলেন – ইহা সাধারণ লোকের দেখা যায় না ।
স্বামীজী বক্তৃতা দেবার সময় ডান হাতের আঙ্গুল প্রথমে সংযত করে হটাৎ ছড়িয়ে দিতেন ভাব প্রকাশের সাথে সাথে – আমেরিকানরা বলত – “He is an orator by divine right ” অর্থাৎ ঈশ্বরদত্ত বাগ্মীশক্তি তাঁর ।
নিবেদিতা লিখেছেন : “স্বামীজীর মঙ্গোলীয়-সদৃশ চোয়াল বুলডগের লক্ষণ -কিছুতেই লক্ষ্যভ্রষ্ট না হওয়ার চিহ্ন বলতেন।”
বেটি লেগেট বলেছিলেন -“আমি জীবনে দুজন প্রকৃত পুরুষ দেখেছি – একজন জার্মান সম্রাট কাইজার আর অপরজন স্বামী বিবেকানন্দ ।