“The Knowledge Library”

Knowledge for All, without Barriers…

An Initiative by: Kausik Chakraborty.

“The Knowledge Library”

Knowledge for All, without Barriers……….
An Initiative by: Kausik Chakraborty.

The Knowledge Library

শ্রদ্ধাঞ্জলি 

শ্রদ্ধাঞ্জলি

শ্রীরামকৃষ্ণের ডাক্তার, ঘোর নাস্তিক, দুর্মুখ, দুঃসাহসী! শ্রীরামকৃষ্ণকে ধমকাতেন আর তুমি করে কথা বলতেন একজনই।তিনি হলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েের দ্বিতীয় এম ডি ডাক্তার, ধন্বন্তরি ! লোকে মরা মানুষ কাঁধে করে নিয়ে এসে বলত, ডাক্তারবাবু আপনি বাঁচিয়ে দিন! এমন ডাক্তারের ফি ছিল সর্বকালীন রেকর্ড! কত? ১৮৬৫ সালে তাঁর ফি ছিল ৩২ টাকা! তখন সায়েব ডাক্তারের সর্বোচ্চ ফি ছিল ১৬ টাকা। তাহলে বুঝতেই পারছেন কত বড় ডাক্তার ছিলেন! তাহলে তাঁর নামটা এবার বলি? তিনি হলেন ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকার! একটি নাম! একটি আলোকবর্তিকা!
” আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর… ”
আনন্দলোকে জন্ম নিলেন মহেন্দ্রলাল সরকার ( ১৮৩৩- ১৯০৪)। হাওড়া জেলার পাইকপাড়ায়।
স্কুল হেয়ার। সেখান থেকে দারুণ রেজাল্ট করে হিন্দু কলেজ ( এখন প্রেসিডেন্সি) সেখান থেকে দারুণ, দারুণ রেজাল্ট করে এলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাক্তারি পড়তে। সেখানেই তাঁর প্রতিভা দেখে বিস্মিত হয়ে গেলেন শিক্ষকরা। তিনি যখন থার্ড ইয়ারের ছাত্র। তখন মেডিকেল শিক্ষকরা তাঁকে মাঝেমধ্যে সেকেন্ড ইয়ারের ক্লাসে ছাত্রদের লেকচার দিতে পাঠাতেন। এটা রেকর্ড!
১৮৬০ সালে মেডিকেল কলেজ থেকে সসম্মানে মেডিসিন, সার্জারি, মিডওয়াইফেরিতে( গাইনোকলজি বিষয়ক) অনার্স নিয়ে পাস করলেন।
১৮৬৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম ডি হলেন। তিনিই হলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় এম ডি।

এরপর প্র্যাকটিশ। ফি হল ৩২ টাকা। আজ পর্যন্ত এত ফি কোন ডাক্তারের হয়নি। সালটা হল ১৮৬৫৷
দারুণ মেজাজ। কঠোর নিয়ম মেনে চলেন। লোকে ভয় খেত। নাম হল দুর্মুখ ডাক্তার।
পুরো প্রফেশনাল। বড়লোকদের ১ টাকাও ছাড় নেই। আবার গরীবদের ভগবান। বিনাপয়সায়।
চিরকাল হোমিওপ্যাথিকে নিয়ে মজা করে এসেছেন। হঠাৎ হোমিওপ্যাথি লাইনে এলেন। হয়ে গেলেন এ্যালোপ্যাথি থেকে ১ নম্বর হোমিওপ্যাথি ডাক্তার। ফিস সেই ৩২ টাকা। কম নেই।

” আমার যে সব দিতে হবে সে তো আমি জানি – আমার যত বিত্ত প্রভু, আমার যত বাণী। ”

ঠিক তাই। তাঁর যে সমাজকে অনেক কিছু দিতে হবে, সেজন্যই তো পৃথিবীতে আসা। গড়ে তুললেন ভারতবর্ষের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাচীনতম গবেষণা কেন্দ্র” ” Indian association for the cultivation of science, ১৮৭৬।
অনেক লড়াই করে শেষপর্যন্ত মেয়েদের বিবাহের বয়েস ঠিক করতে পারলেন ১৬ বছর।
আসামে চা শ্রমিকদের দুরবস্থা নিয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন। শ্রমিকদের ” কুলী ” বলে ডাকা নিয়ে চরম আপত্তির কথা জানালেন সরকারকে।

আর অনুভব করলেন মহিলারা লেডি ডাক্তারদের কাছে তাদের সমস্যা যতটা খুলে বলতে পারে ততটা পুরুষ চিকিৎসকদের কাছে নয়।
তাই তাঁর ও দ্বারকানাথ গাঙ্গুলির প্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়ে ভারতবর্ষের দ্বিতীয় এবং পশ্চিমবঙ্গের প্রথম বিলেত ফেরত মহিলা ডাক্তার হলেন কাদম্বনি গঙ্গোপাধ্যায় ( বসু)। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা গ্র্যাজুয়েট।
আর দুর্ভাগ্য আর একজন মহিলা ডাক্তার হতে পারলেন না। চেন্নাই গেছলেন ডাক্তারি পড়তে। অসুস্থ হয়ে মাঝপথে ডাক্তারি পড়া কমপ্লিট করতে পারলেন না। তিনি হলেন স্যার জগদীশ বসুর সহধর্মিণী লেডি অবলা বসু।

এবার সেই যুগান্তকারী ঘটনা!

” আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে।
এ জীবন পূণ্য করো দহন – দানে। ”

অনেক টাকাকড়ি, নাম সুখ্যাতি তো হল। এ জীবন তবু পূর্ণ হল না!
একদিন কাশীপুর থেকে আচমকা ডাক এল!

শ্রীরামকৃষ্ণের কর্কট রোগ ধরা পড়েছে।মহেন্দ্রলাল সরকার এলেন!
এসেই রোগীকে চোটপাট। ঠাকুরের বিছানায় সটান বসে পড়ে, “তুমি”করে ধমকাতে লাগলেন, তুমি নাকি আজকাল পরমহংসগিরি করছো?। চারপাশে সব আগামীদিনের বিখ্যাত হবেন সব মানুষরা দাঁড়িয়ে পড়েছেন। শ্রী মা ও আছেন।
জিভ টেনে ধরলেন। কথামৃতে ঠাকুর বলছেন, যেন গরুর জিভ টেনে ধরল, কি যন্ত্রণা! , কি যন্ত্রণা! … এইসব মোটামুটি।
এদিকে শ্রীরামকৃষ্ণকে ধমকাচ্ছেন আর ঠাকুর হাসছেন। হয়’ ত মনে মনে বলছেন, ওরে দাঁড়া, দেখব তুই কতবড় নাস্তিক। কেশব সেন, বঙ্কিম, মাইকেল, বিদ্যাসাগর, গিরীশ, নরেন সব এখানে ড্রাইভ মারল। এবার দেখি মহেন্দ্র ডাক্তার তোমার দৌড়!

যাবার আগে মহেন্দ্রলাল বলে গেলেন, কথা বলা, নাচা গানা এসব চলবে না। তাহলে রোগ বেড়ে যাবে।
ডাক্তার সরকার নাস্তিক ছিলেন। কিন্তু শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে এলেই কেমন দ্রবীভূত হয়ে যান।
চেম্বার ফেলে ৩২ টাকার ডাক্তার ছুটে আসছেন শ্রীরামকৃষ্ণকে দেখতে।
বলছেন, শোনো তুমি শুধু আমার সঙ্গে কথা বলবে। কোন ধর্মের কথা একবারও কেউ বলছেন না। অথচ মহেন্দ্রলাল চেম্বার ফেলে ঘন্টার পর ঘন্টা শ্রীরামকৃষ্ণের সঙ্গে গল্প করছেন। আসছেন প্রায়ই চেম্বার ফেলে। ঠাকুর হাসেন। ঠাকুর হেসে বলেন, কি ডাক্তার চেম্বারে যাবেন না? ডাক্তার রাগ দেখিয়ে বলেন, সে তোমায় অত ভাবতে হবে না? ঠাকুর হাসেন, এ তো রাগ নয়, এ যে অনুরাগ!

এবার শ্রীরামকৃষ্ণ বিদায় নিলেন। মহেন্দ্রলাল সরকার খবর পেয়ে এলেন। দেখলেন। বললেন, প্রাণবায়ু নির্গত হয়ে গেছে।
নিঃশব্দে নেমে এলেন। একজনকে বললেন, শোনো একটা ফটো তোলার ব্যবস্থা কর। এই রইল আমার ১০ টাকা চাঁদা।

ডাক্তারকে কাঁদতে নেই। আবার যে সে ডাক্তার নয়। চরম নাস্তিক ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকার! লোকে কি বলবে! নাস্তিক মহেন্দ্রলাল কাঁদছেন!
কিন্তু ” ভালবাসি” কি শুধু মুখে বললেই ভালবাসা বলা হয়? হৃদয়ের ভাষা কি সবাই পড়তে পারে?
ভালবাসা মুখে বলা হয় নি। হৃদয় শুধু বলেছিল!
” আমি তোমায় ভালবাসি, ভালবাসি, হে শ্রীরামকৃষ্ণ!”

আমি নাস্তিক। কিন্তু মানুষ চিনি। তুমি মানুষটা একেবারে খাঁটি। মহেন্দ্রলাল সরকার চলে গেলেন নিঃশব্দে। আজ তাঁর নিজের একটা ওষুধ চাই, বুকের ভেতরটা এমন আনচান করছে কেন! ৩২ টাকার ডাক্তারকে কে এখন ব্যথা জুড়োনোর ওষুধ দেবে?

“জুড়াইতে চাই, কোথায় জুড়াই…!”
২রা নভেম্বর, ১৮৩৩ ‘ঠাকুরের’ ডাক্তারের জন্মদিন !!

Sign up to Receive Awesome Content in your Inbox, Frequently.

We don’t Spam!
Thank You for your Valuable Time

Share this post