আমার বাড়ি, আমার গাড়ি, আমার সম্পত্তি, আমার সম্মান, আমার ইগো….। সবই বুঝি আমার। কিন্তু আমার মধ্যেকার আমি’টা কি সত্যিই আমার? আমার ভিতরের আমিটা একটা অহমবোধ যার প্রকৃতঅর্থে কোন অস্তিত্ব নেই। যাকে বয়ে নিয়ে চলি সারাটাজীবন; তবুও শান্তি পাই না। শান্তি কোথায় পাবো? যখন জীবনটাই একটা যুদ্ধক্ষেত্র। শান্তি আসবে তো সেই শেষের সেদিনে, যেদিন শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে চলে যাবো।
কিন্তু কে চলে যাচ্ছে? একটা পার্থিব শরীর। পঞ্চভূত থেকেই যার আবির্ভাব আবার পঞ্চভূতেই সে বিলীন হবে; সেটাই তো স্বাভাবিক। হেলায় পড়ে থাকে সব যা কিছু পার্থিব। তাই এই পৃথিবীতে আমার বলে কিছু নেই; হয় না।
যখন একটা শিশু জন্মগ্রহণ করে, না তার পরণে কিছু থাকে, না তার সম্পত্তি, সম্মান ইত্যাদি তার সঙ্গে থাকে। আবার একজন পূর্ণবয়স্ক যখন পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যান তখনও তার পরণে কিছু থাকে না। কোন গয়না, বাড়ি, গাড়ি,ব্যাংক ব্যালেন্স কোনকিছুই সে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পারে না।
তাহলে মানুষ জন্মায় কেন? কারণ মানব জনম হলো শ্রেষ্ঠ জন্ম। এক একটি ম্যাচিওরড সোল এনার্জীকে মানব দেহ ধারণ করে পৃথিবীতে পাঠানো হয়। সঙ্গে থাকে হাজার হাজার জন্মের কর্মফল। সোল কনট্রাক্ট অনুযায়ী কর্ম সাধন করাই তার একমাত্র কাজ। সেই কাজ করতে গিয়ে সে বিভিন্ন রকম মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ হয়। পজিটিভ কাজ করলে সোল এনার্জী উন্নীত হয়। নেগেটিভ কাজ করলে তাকে সোল শক পেতে হয়; ট্রিগারড হতে হয়। আঘাতে আঘাতে জর্জরিত হতে হয়। মনে হয় যেন কালো রাত্রি নেমে এসেছে জীবনে। হ্যাঁ। সত্যিই কালো রাত নেমে আসে একটি সুন্দর ভোর দেখবার অপেক্ষায়। অর্থাৎ আমাদের মধ্যেকার নেগেটিভিটি তথা কালো স্যাডো গুলোকে পরিষ্কার করতে, প্রপার শিক্ষা লাভ করাতে আমাদের উপর নেগেটিভ অ্যাটাক করানো হয়। অনেকটা কাঁচ দিয়ে হীরে কাটার মতো। অথবা বলা যেতে পারে বিষে বিষে বিষক্ষয়।
আর এইসব কিছু ঘটাতে রিমোট কন্ট্রোল যার হাতে থাকে, তিনি ঈশ্বর। ঈশ্বর মানে কোন ধর্মীয় দেবতা বা গুরু নয়। ঈশ্বর মানে সেই সর্বো শ্রেষ্ঠ, সর্বোত্তম শক্তি যা একটি নয় না জানি কতো বিশ্ব তথা ইউনিভার্সকে কন্ট্রোল করে চলেছে। আর মানব জন্মলাভের কারণ মোক্ষ লাভ করা। অর্থাৎ চির মুক্তি। অর্থাৎ ঐ সর্বোচ্চ শক্তির সঙ্গে মিশে যাওয়া। কারণ ঐ শক্তি থেকেই প্রতিটি সোল এনার্জী সৃষ্টি হয়েছে। যেহেতু এনার্জীর ক্ষয় নেই; মৃত্যু নেই। রূপ বদলে বদলে সে নিজের জায়গায় ঠিক ফিরে যাবে। এটাই সৃষ্টির নিয়ম। আর এই নিয়মে আমরা সকলে বাঁধা পড়ে আছি। অতএব আমি আমি করার আগে ভাবা দরকার আমির অস্তিত্বটা আসলে কি ও কোথায়? প্রতিটি বিষয়কে দেখার দৃষ্টিকোণ ও দৃষ্টিভঙ্গি বদলালেই আমরা নিজের আমাটাকে সন্তুষ্ট করতে পারবো। নতুবা বাস্তবের চিতায় প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ জ্বলে পুড়ে মরতে হবে।