১ – কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কান্নার শব্দ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে।
২ – একদিকে আপনার মৃত শরীর চুল্লিতে জ্বলতে থাকবে, ওদিকে অন্তিম বিদায় দিতে আসা লোকদের মধ্যে কেউ কেউ ফোনে কারোর সঙ্গে বকবক করতে ব্যস্ত থাকবে; কেউ ফেসবুক, কেউ whatsapp-এ মশগুল থাকবে। আবার দূরে জটলা পাকিয়ে কিছু লোক সংসার, ব্যবসা খেলা, রাজনীতি – এইসব বিষয় নিয়ে চর্চা করতে থাকবে।
৩ – আত্মীয়স্বজনকে খাওয়াতে আর তাদের দেখাশোনা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়বে পুরো পরিবার।
৪ – কিছু পুরুষ চা খেতে উশখুশ করবে। ব্যবস্থা নেই দেখে বাইরের দোকানে চলে যাবে।
৫ – কোনো আত্মীয় বা বন্ধু আপনার ছেলে বা মেয়ের কাছে ফোন করে জানাবে যে ইমার্জেন্সি কারণে সে ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হতে পারবে না।
৬ – পরের দিন রাতের খাবার খাওয়ার পর কিছু আত্মীয়ের সংখ্যা কমে যাবে, কিছু লোক আবার রান্নায় নুন কম ছিল – এই নিয়ে বিরক্ত হবে।
৭ – ভীড় ধীরে ধীরে হালকা হতে থাকবে।
৮ – পরবর্তী কয়েক দিন আপনার ফোনে কিছু কল আসতে পারে না জেনে যে আপনি মরে গেছেন।
৯ – আপনার অফিস, আপনার ব্যবসা – আপনার বদলি কাউকে রাতারাতি খুঁজে নেবে।
১০ – এক সপ্তাহ পরে আপনার মৃত্যুর খবর শোনার পর আপনার শেষ পোস্ট কী ছিল, জানার জন্য উৎসাহী কেউ ফেসবুক ঘাঁটবে।
১১ – হপ্তাখানেকের মধ্যেই আপনার ছেলে, মেয়ে নিজের নিজের পড়াশোনার জগতে, কর্মক্ষেত্রে বা নিজের নিজের বাসস্থানে চলে যাবে।
১২ – মাস শেষ হতে না হতে আপনার জীবনসঙ্গী কোনো কমেডি শো দেখে আবার হাসতে থাকবে। সবার জীবন আবার স্বাভাবিক নিয়মে চলবে। আপনাকে এই পৃথিবীর মানুষজন আশ্চর্য গতিতে ভুলে যাবে।
১৩ – হ্যাঁ, আপনার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী বেশ আয়োজন করে পালন করা হবে। পলক ফেলা মাত্রই একটা বছর চলে যাবে আর আপনার সম্পর্কে কথা বলার, আলোচনা করার কেউ থাকবে না।
আপনি চিরকালের জন্য মুছে গেলেন। সবার মন থেকেও।
সবাই যখন আপনাকে দ্রুত ভোলার কম্পিটিশন লড়ছে, তাহলে আপনি উন্মাদের মতো কিসের জন্য এতো দৌড়চ্ছেন? কেন এতো চিন্তা করছেন? দিন-রাত। আপনি কি এসব করতেই পৃথিবীতে এসেছিলেন? এটাই কি ছিল আপনার নাতিদীর্ঘ জীবনের আসল লক্ষ্য? আপনি কি আপনার একমাত্র জীবনে পরিবার, পরিজন, আত্মীয়, বন্ধুদের সুখের জন্য, তাদের সন্তুষ্ট করতেই জন্ম নিয়েছিলেন?
বিশ্বাস করুন, কারোর জন্য কোনোদিন কিচ্ছু থেমে থাকে না। কিস্যু না। আপনি না থাকলেও সব স্বাভাবিক চলবে। কোনো ব্যথাই চিরকালীন নয়। কেউ মনেও রাখে না। জীবন একবারই আসে। মশায়, প্রাণভরে বাঁচুন। আর সম্ভব হলে এই জীবনের যে পরম উদ্দেশ্য, তার যতটা কাছে পৌঁছনো সম্ভব, তার চেষ্টা করুন। এটাই জীবন।
ব্যস, এইটুকুই জীবন।