ভারতীয় মশলার সম্বন্ধে বলার আগে বলে নেয়া ভালো ভারত সারা পৃথিবীতে ‘বিশ্বের মশলা বাটি’ (‘Spice Bowl of the World’) হিসেবে পরিচিত। আমাদের বৈদিক যুগে মশলার উল্লেখ রয়েছে যা সত্যিই চমকপ্রদ এবং আজও আমাদের ভারতীয় রান্নাঘরগুলিতে নানা ধরনের এই মশলার ব্যবহার বিদ্যমান। এখানে কোনো দ্বিমত নেই, ভারত বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ মসলা রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে আজ প্রতিষ্ঠিত। এখনো পর্যন্ত, ভারত থেকে সারা বিশ্বে মশলা ব্যবসায় প্রায় ৪০% বা তারও বেশি রফতানি করা হয়।
ভারতকে মশলার দেশ বলা হয় কারণ আমাদের বিপুল বৈচিত্যের এই দেশে নানা প্রাকৃতিক অঞ্চল আছে যেমন গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বন, উচ্চভূমি, জলাভূমি, সবুজ ভূমি বা উর্বর উপত্যকা থেকে প্রাপ্ত মশলা অতি সহজেই পাওয়া যায়। ভারতের প্রতিটি অঞ্চলের প্রতিটি সম্প্রদায় তাদের স্থানীয় উপলব্ধতা অনুযায়ী মশলা ব্যবহার আদি যুগ থেকে করে আসছে এবং তাদের নিজেদের প্রয়োজন অতিরিক্ত মশলা ভারতের অন্য অঞ্চলের রান্নাতে ব্যবহার করতে শেখায়।
ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের ভূগোল, জলবায়ু এবং মাটির ধরন মশলার বৈচিত্র্যকে নানা ভাবে প্রভাবিত করে। হলুদ, ধনে, জিরা, গোলমরিচ, দারচিনি, লবঙ্গ, জায়ফল, এলাচ ইত্যাদি এগুলি হচ্ছে শুধু মাত্র কয়েকটি উদাহরণ। আরো বৈচিত্র্যময় মশলা আছে যা ভারতের প্রতিটি কোনায় বিদ্যমান যার নাম হয়ত এখনো আমাদের জানা হয়নি। এই প্রতিটি মশলাই তাদের নিজস্ব স্বাদ, সুগন্ধ এবং উপকারী গুণাবলী ধারণ করে।
খাবার ও মসলা যেমন একটি অপরটির সাথে সম্পর্কযুক্ত তেমনি খাবারের ইতিহাসের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই চলে আসে মসলার ইতিহাসও। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে বাণিজ্যের প্রথম ও প্রধান পণ্য ছিল এই মসলা। যা পুরো পৃথিবীর ইতিহাসকে এক সময় প্রভাবিত করে।
হাজার বছর ধরে ভারতীয় মশলার বাণিজ্য রুট বারংবার পরিবর্তিত হয়েছে। সিল্ক রোড থেকে শুরু করে আরব পেনিনসুলা স্পাইস রুট, ভাস্কো দা গামার সামুদ্রিক রুট এবং আধুনিক যুগের সমুদ্র ও আকাশপথে বিশ্বব্যাপী রপ্তানি – মশলার এই যাত্রা ভারতের ইতিহাসে অষ্ঠেপিষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছে। মশলার এই বাণিজ্যই ভারতকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে সংযুক্ত করেছে এবং দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এখানে কয়েকটি ভারতীয় মশলার বিশেষ বাণিজ্য চ্যানেল কথা দেয়া হলো যা আমরা আমাদের ইতিহাস বইতে পড়েছি:
– সিল্ক রোড (প্রায় ২০০ বিসি – ১৪৫০ সি ই) সিল্ক রোড হলো বাণিজ্য পথের সুপ্রাচীন নেটওয়ার্ক যা চীনকে ভূমধ্যসাগরীয় বিশ্বের সাথে সংযুক্ত করেছিল, ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের এর মধ্য সংযুক্ত ছিল। যাকিনা পূর্ব এশিয়াতে তথা চীনের সাথে আমাদের ভারতীয় মশলার বাণিজ্য হয়।
– আরব পেনিনসুলা স্পাইস রুট (১ম শতাব্দী সিই – ১৫ শতক) এই সময় ভারতীয় মসলা বিভিন্ন স্থল ও সমুদ্রপথে মধ্যপ্রাচ্যে পরিবহণ করা হতো। আর এই বাণিজ্য মধ্যপ্রাচ্যের সাথে ভারতের গভীর সম্পর্ক ছিল।
– ভাস্কো দা গামার সামুদ্রিক রুট (সেই ১৫ শতকের দিকে) ১৪৯৮ সালে পর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো দা গামার সমুদ্রযাত্রা মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের মধ্য দিয়ে স্থলপথকে বাইপাস করে ইউরোপ থেকে ভারতে একটি সরাসরি সমুদ্র পথ খুলে দিয়েছিল। যা পরবর্তীকালে এক নতুন যুগের সূচনা হয়।
– আধুনিক মশলার বাণিজ্যিক রুট (২০ শতক – বর্তমান) আধুনিক যুগে ভারতীয় মসলা সমুদ্র ও আকাশপথে বিশ্বব্যাপী রপ্তানি করা হয়।