“The Knowledge Library”

Knowledge for All, without Barriers…

An Initiative by: Kausik Chakraborty.

“The Knowledge Library”

Knowledge for All, without Barriers……….
An Initiative by: Kausik Chakraborty.

The Knowledge Library

লুচি উপাখ্যান

আজ লুচি উপাখ্যান শোনাবো আপনাদের, লুচি আমাদের বঙ্গে অত্যন্ত জনপ্রিয় সহযোগী খাবার। বাঙালির ক্লাসিক খাবার গুলির মধ্যে লুচি অন্যতম

ময়দা দিয়ে তৈরি এই ফুলে ওঠা গোলাকার ভাজা পদটি বাঙালির সকালের জল খাবার, অতিথি আপ্যায়ন থেকে পুজোর প্রসাদ সবেতেই এর উপস্থিতি চোখে পরে। বিশেষ করে, দুর্গাপূজার সময় লুচির জনপ্রিয়তা যেন আদি অন্ত প্রাণ। “লুচি এই সংগত বাঙালি যতদিন বাঁচিয়া থাকিবে ততদিন থাকিবে।”

লুচি ও কষা মাংস, লুচি ও আলু চচ্চড়ি, লুচি ও ছোলার ডাল, লুচি ও আলুর দম; লুচি, ছোলার ডাল ও সন্দেশ এবং লুচি ও রসগোল্লা আরো আরো অনেক নাম যা শুধু বাঙালির ঘরেই সম্ভব। আমাদের বাঙালি মননে বিশুদ্ধ লুচি মানে তার রং সাদা হওয়া চাই। শেফ অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের মতে “বাঙালির মানসে লুচির একটা ভিসুয়াল আইডেন্টিটি রয়েছে। তার থেকে বিচ্যুতি হলে ক্ষমা নেই। তাই লুচির রং লালচে হলে বিশুদ্ধবাদী বাঙালি ভোজনরসিকদের কাছে তা কখনই গ্রহণীয় নয়।”

আমাদের এই লুচির উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদ রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, সংস্কৃত শব্দ ‘লোচক’ থেকে লুচি শব্দটি এসেছে। আবার কেউ কেউ বলেন, হিন্দি শব্দ ‘লুচ’ থেকে এই নামটি এসেছে। একাদশ শতকে পাল যুগের বিখ্যাত চিকিৎসক চক্রপাণি দত্ত রচিত ‘দ্রব্যগুণ’ গ্রন্থে লুচির বর্ণনা পাওয়া যায়। তিনি লিখেছেন, ‘সুমিতায়া ঘৃতাক্তায়া লোপ্‌ত্রীং কৃত্বা চ বেল্লয়েৎ। আজ্যে তাং ভর্জয়েৎ সিদ্ধাং শষ্কুলী ফেনিকা গুণাঃ।।’ যার বাংলা অর্থ হল, ‘গম চূর্ণকে ঘি দিয়ে মেখে, লেচি করে বেলে, গরম ঘিয়ে ভেজে তৈরী হয় শষ্কুলী, যার গুণ ফেনিকার মত।’ শষ্কুলী লুচির আদি রূপ। পাল যুগে তিন প্রকার শষ্কুলী বা লুচি প্রচলিত ছিল – খাস্তা, সাপ্তা ও পুরি। ময়ান দিয়ে ময়দার লেচি বেলে তৈরি হত খাস্তা, ময়ান ছাড়া ময়দার লেচি বেলে তৈরি হত সাপ্তা, ময়দার পরিবর্তে আটা ব্যবহার করলে তাকে বলা হত পুরি। ১৮৫৪ সালে রামনারায়ণ তর্করত্ন রচিত ‘কুলীন কুলসর্বস্ব’ গ্রন্থে লুচিকে উত্তম ফলারের সর্বপ্রথম উপাদান হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। আবার ১৯০৯ সালে প্রজ্ঞাসুন্দরী দেবী প্রকাশিত “আমিষ ও নিরামিষ আহার” রান্নার বইতে এই লুচির উল্লেখ নেই কিন্তু খাস্তা কচুরি উল্লেখ আছে।

পাল যুগের খাস্তা লুচিই আবহমান বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় নোনতা খাবার লুচি। আর সেই যুগের আটার লুচিই আজ উত্তর ভারতের জনপ্রিয় খাবার পুরি। লুচিতে কোনো পুর থাকে না। সাধারণভাবে আটার লুচি বা পুরিতেও কোনো পুর থাকে না। লুচির সমগোত্রীয় পুর দেওয়া নোনতা খাবার গুলো হল ডালপুরি, কচুরি ও রাধাবল্লভী।

এই বঙ্গে ভৌগোলিক অবস্থানের সাথে লুচির প্রকারভেদ লক্ষ্য করা যায় এবং সেটা বিশেষ ভাবে লক্ষণীয়। কলকাতা থেকে দূরবর্তী জেলাগুলোয় লুচির আকৃতি বড়, এবং সেই আকৃতি কলকাতার দিকে অগ্রসর হলেই ক্রমশই কমতে থাকে। গ্রাম বাংলায় প্রচলিত লুচির ব্যাস ছয় থেকে আট ইঞ্চি। কলকাতায় প্রচলিত লুচির ব্যস তিন থেকে চার ইঞ্চি।

উচ্চারণে ঘটিদের মধ্যে কথ্য ভাষায় লুচিকে ‘নুচি’ বলা হয় আর ঘটি-বাঙাল বাক্য যুদ্ধে বাঙালরা ঘটিদের লুচির এহেন উচ্চারণকে ব্যঙ্গ করে থাকেন

সংগৃহীত

Sign up to Receive Awesome Content in your Inbox, Frequently.

We don’t Spam!
Thank You for your Valuable Time

Share this post

error: Content is protected !!